top of page

নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ: কেন এক্লেক্টিক নেতা ও ভাষা এক মুদ্রার দুই পিঠ ?

  • Writer: Shehzaad Shams
    Shehzaad Shams
  • Jun 16
  • 3 min read

আপনি যদি আজকের নেতৃত্বের প্লেবুকটি দেখেন, দেখবেন যে এখানে সহানুভূতি ও আবেগিক বুদ্ধিমত্তা (ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা EQ) নিয়ে অনেক আলোচনা রয়েছে। এগুলো অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিশ্ব যতই বৈচিত্র্যময় ও আন্তঃসংযুক্ত হয়ে উঠছে, ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে নেতৃত্বের পরবর্তী বড় অর্জন শুধু অন্যের অনুভূতি অনুভব করা নয়, বরং সত্যিকার অর্থে এক্লেক্টিক বা বিবিধপ্রজ্ঞ হওয়া, বিভিন্ন সংস্কৃতি, প্রেক্ষাপট ও শাখা থেকে ধারণা মিশিয়ে, খাপ খাইয়ে নিয়ে এবং সেগুলো থেকে উপকৃত হয়ে সংযোগ স্থাপন করা।


ree

কেন এক্লেক্টিক নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ?

এক্লেক্টিক নেতারা শুধু “থট লিডার” বা ক্যারিশম্যাটিক যোগাযোগকারী নন। তারা হলেন বিবিধপ্রজ্ঞ - যারা মনোবিজ্ঞান, রাজনীতি, ভাষাবিজ্ঞান এবং ব্যবসা থেকে ধারণা মিশিয়ে বাস্তব সময়ে প্রয়োগ করতে পারেন। এটি শুধু বৌদ্ধিক কৌতূহলের বিষয় নয়, এটি একটি ব্যবহারিক ‘সুপারপাওয়ার’। যে বিশ্বে কর্মী দল ভিন্ন মহাদেশ ও সংস্কৃতি জুড়ে ছড়িয়ে আছে, সেখানে সংযোগ দেখতে পারা, বিভিন্ন ঐতিহ্য থেকে শেখা এবং তাৎক্ষণিকভাবে নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে পারাই একজন সফল নেতাকে আলাদা করে দেয়।


ভাষা: এক্লেক্টিসিজমের দৈনন্দিন অনুশীলন

এখানে সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ বিষয় হলো, ভাষা হল এক্লেক্টিসিজম অনুশীলনের সবচেয়ে সহজলভ্য হাতিয়ার। প্রতিটি কথোপকথন, প্রতিটি ইমেইল, প্রতিটি মিটিংই হল সেই এক্লেক্টিক মাংসপেশি ব্যবহারের সুযোগ। যখন একজন নেতা আনুষ্ঠানিক থেকে অনানুষ্ঠানিক ভাষায় যান, বহুসংস্কৃতির দলের জন্য তাঁর বার্তা খাপ খাইয়ে নেন বা অন্য সংস্কৃতির উপমা ব্যবহার করেন, তখন তিনি শুধু ভদ্রতা দেখাচ্ছেন না, বরং সক্রিয়ভাবে এক্লেক্টিক নেতৃত্বের শিল্প চর্চা করছেন।


ভাষা নেতাদের কী করতে সাহায্য করে?

  • বিভিন্ন সংস্কৃতি ও শাখা থেকে প্রভাব মিশ্রণ করা।

  • দৃশ্যত সম্পর্কহীন ধারণাগুলোর মধ্যে সাদৃশ্য তৈরি করে সেতু বানানো।

  • শ্রোতা, মুহূর্ত ও বার্তার সাথে খাপ খাইয়ে নিজের শৈলী পরিবর্তন করা।

এক্ষেত্রে বহুভাষী হওয়া (পলিগ্লট) মূল বিষয় নয় (যদিও সেটাও ভালো), মূল বিষয় হল ভাষাগতভাবে চটপটে হওয়া: নিজের গতি বদলানো, কোড-সুইচ করা এবং রুমের সবাইকে দেখা ও বোঝা অনুভব করানো।


মানুষের সংযোগের ভিত্তি হিসেবে ভাষা

মূলত, ভাষা দ্বারা চালিত এক্লেক্টিক নেতৃত্ব আমাদেরকে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ও সংস্কৃতির মূল ভিত্তি বুঝতে সাহায্য করে। ভাষায়ই আমাদের মূল্যবোধ, গল্প এবং পরিচয় লুকিয়ে থাকে। এটিই আমাদেরকে আস্থা তৈরি করতে, দ্বন্দ্ব সমাধান করতে এবং একাত্মতার অনুভূতি সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। নেতারা যখন ভাষায় দক্ষ হন, তখন তারা শুধু তথ্য বিতরণ করেন না, বরং তাদের দল ও প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতিই গড়ে তোলেন।


সহানুভূতি ও আবেগিক বুদ্ধিমত্তার বাইরে

সহানুভূতি ও আবেগিক বুদ্ধিমত্তা বহু বছর ধরে নেতৃত্বের আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে, এবং সেগুলো অদৃশ্য হবে না। কিন্তু এখানে মূল বিষয় হলো: ভাষা এই দুটিরই মূল চাবিকাঠি। সঠিক শব্দ, সঠিক স্বর সঠিক সাংস্কৃতিক রেফারেন্স ছাড়া সহানুভূতি দেখানো যায় না। আসলে, বহুভাষী ও বহুসাংস্কৃতিক বিশ্বে, সহানুভূতি ও আবেগিক বুদ্ধিমত্তা সবচেয়ে ভালোভাবে বিকশিত হয় এক্লেক্টিক, ভাষাভিত্তিক নেতৃত্বের মাধ্যমে।


আগামী দিনের নেতাদের শুধু অন্যের অনুভূতি “বুঝতে” পারলেই চলবে না, তাদের এক্লেক্টিক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে: বিভিন্ন ধারণা মিশিয়ে, খাপ খাইয়ে নিয়ে এবং ভাষাগত চটপটে হয়ে উদ্ভাবনী হওয়ার ক্ষমতা। এটিই তাদেরকে নিজেদের ও দলের মধ্যে সহানুভূতি ও আবেগিক বুদ্ধিমত্তা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকলেও।


বাস্তব বিশ্বের উদাহরণ

  • নেলসন ম্যান্ডেলা আফ্রিকান্স ও আদিবাসী ভাষা ব্যবহার করে বিভক্ত জাতিকে এক করেছিলেন—শুধু অঙ্গভঙ্গি হিসেবে নয়, বরং এক্লেক্টিক নেতৃত্বের কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে, যাতে একাধিক সাংস্কৃতিক উৎস থেকে শক্তি নেওয়া হয়েছিল।

  • অ্যাঞ্জেলা মার্কেল জার্মান, রুশ ও ইংরেজিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জটিল আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, দেখিয়ে দিয়েছিলেন কীভাবে ভাষাগত চটপটে হওয়া আস্থা তৈরি ও ফলাফল আনতে পারে।

  • ক্রাইস্টচার্চ ট্র্যাজেডির পর জেসিন্ডা আরডার্ন মাওরি অভিবাদন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভাষা ব্যবহার করেছিলেন, দেখিয়েছিলেন কীভাবে নেতারা ভাষা ব্যবহার করে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে সহানুভূতি ও ঐক্য গড়ে তুলতে পারেন।

এই নেতারা শুধু সহানুভূতি বা আবেগিক বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভর করেননি—তারা ভাষাকে সেতু, টুলকিট ও উদ্ভাবনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেছেন।


অনুশীলনে এক্লেক্টিক নেতৃত্ব কেমন দেখায়?

  • সৃজনশীল যোগাযোগ: বিভিন্ন উৎস থেকে গল্প, উপমা ও সাংস্কৃতিক রেফারেন্স ব্যবহার করে অনুপ্রাণিত করা ও সংযোগ স্থাপন করা।

  • উন্মুক্ত মন নিয়ে খাপ খাওয়ানো: দল, চ্যালেঞ্জ ও প্রেক্ষাপটের সাথে মানিয়ে নিতে নেতৃত্বের শৈলী ও ভাষা পরিবর্তন করা।

  • কৌতূহল ও শেখা: সবসময় নতুন শব্দ, নতুন ধারণা ও বিশ্ব দেখার নতুন উপায় খুঁজতে থাকা।

  • ঝুঁকি নেওয়া ও উদ্ভাবন: নতুন পদ্ধতি চেষ্টা করা ও স্ট্যাটাস কো চ্যালেঞ্জ করতে ইচ্ছুক হওয়া, এটা জেনে রাখা যে ভাষা হল পরীক্ষা-নিরীক্ষার নিরাপদ স্থান।


ঝুঁকি বা চ্যালেঞ্জ কি আছে?

হ্যাঁ, এক্লেক্টিক ও ভাষাগতভাবে চটপটে হওয়া সবসময় সহজ নয়। সবাই একাধিক ভাষায় দক্ষ হতে পারে না, এবং অতিরিক্ত চেষ্টা করলে আন্তরিক না হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু মূল বিষয় হল নিখুঁত হওয়া নয়, বরং উন্মুক্ত, খাপ খাওয়াতে সক্ষম এবং পার্থক্যের সাথে জড়িত হতে ইচ্ছুক থাকা। বাস্তব ঝুঁকি হল একটি মাত্র নেতৃত্ব বা যোগাযোগের পদ্ধতিতে আটকে থাকা, বিশেষ করে বিশ্ব যখন আরও জটিল হয়ে উঠছে।


মূল বার্তা

যদি সহানুভূতি ও আবেগিক বুদ্ধিমত্তা আধুনিক নেতৃত্বের “কী” হয়, তবে ভাষা দ্বারা চালিত এক্লেক্টিসিজম হল “কীভাবে”। ভাষা হল এক্লেক্টিক নেতৃত্ব অনুশীলনের সবচেয়ে সরাসরি ও ব্যবহারিক উপায়, কারণ এটি আমাদেরকে পার্থক্যের মুখোমুখি হতে, নিজের পদ্ধতি খাপ খাইয়ে নিতে এবং সাধারণ মিল খুঁজে পেতে বাধ্য করে। আগামী দিনের নেতারা শুধু আবেগিকভাবে বুদ্ধিমান হবেন না, বরং তারা হবেন এক্লেক্টিক—নতুন কিছু মিশিয়ে, গ্রহণ করে ও গড়ে তুলতে প্রস্তুত, যেখানে ভাষা হবে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।


তাই, যদি আপনি আপনার নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চান, তবে শুরু করুন ভাষা থেকে। এটি হল এক্লেক্টিসিজমের প্রবেশদ্বার এবং যেকোনো দল, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে মানুষের সংযোগ ও সংস্কৃতির পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মুক্ত করার চাবিকাঠি।



 
 
 

 

© 2025 Rononiti, All Rights Reserved, Company Number 11918817, Registered in England & Wales.

 

bottom of page